বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ছাত্রদল নেতার গুদামে সাড়ে ১৭ লাখ টাকার ভারতীয় কম্বল-সিগারেট যে ১২ নির্দেশনা দিলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল কাদের আসেন, আমার বাসায় আসেন: মির্জা ফখরুল পিআইবির মহাপরিচালক হলেন ফারুক ওয়াসিফ চাকরির বয়সসীমা ৩৫ চান প্রশাসন ক্যাডাররা, জনপ্রশাসনকে জানাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বন্যা দেখতে গিয়ে নদীতে পড়ে গেলেন দুই এমপি ফ্যাসিবাদে জড়িত কবি, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের আইনের আওতায় আনা হবে গণহত্যায় উসকানিদাতা কবি-সাংবাদিকদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে : নাহিদ ইসলাম সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সুফল পাবে জনগণ : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমরা সরকারকে সময় দিতে চাই : মির্জা ফখরুল
কী আছে সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরের চিঠিতে

কী আছে সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরের চিঠিতে

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশের একজন আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির সাথে কথিত সম্পর্কের জের ধরে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনকে ‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের’ প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি চিঠি পাঠিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশনে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন বেশ আলোচনা চলছে।

গত ১৩ জুন ইস্যু করা চিঠিতে বলা হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন ও চিত্রনায়িকা পরীমনির মধ্যে ‘অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক’ ছিল এবং তিনি ‘নিয়মিত পরীমনির বাসায় রাত্রিযাপন শুরু করেন’।

বিষয়টি নিয়ে চিত্র নায়িকা পরীমনির সাথে যোগাযোগ করা হয়। তখন তিনি বলেন,‘বিষয়টি নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে চাই না।’

চেষ্টা করা হলেও পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকায় কর্মরত অবস্থায় নায়িকা পরীমনির সাথে গোলাম সাকলোয়েনের ঘটনাক্রমে দেখা হয় এবং যোগাযোগ আরম্ভ হয়।

২০২১ সালে ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত বোট ক্লাবে বিতণ্ডার জেরে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে চিত্রনায়িকা পরীমনি মামলা করেন।

তখন বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনার সূত্রপাত হয়। একপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের সাথে পরীমনির জন্মদিন উদযাপন করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

সাকলায়েন তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ভিডিও ছড়িয়ে যাবার পর সাকলায়েনকে সেখান থেকে বদলি করা হয়। সর্বশেষ তিনি ঝিনাইদহ জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার-এ কর্মরত ছিলেন।

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে পরীমনি‘ধর্ষণ চেষ্টা ও হত্যা চেষ্টা’ মামলা দায়ের করার পর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে পরীমনির বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা, মারধর, ভাঙচুর, ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে পাল্টা মামলা দায়ের করেন।

সেই মামলায় পরীমনিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিছুদিন পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। উভয় মামলা বর্তমানে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে যা আছে
সাকলায়েন-এর মোবাইলফোনের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে পুলিশের বৈধ আড়িপাতা শাখা বা এলআইসি। তাতে দেখা গেছে, ৪ জুলাই ২০২১ থেকে ৪ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত, একমাস দিনে-রাতে বিভিন্ন সময় নায়িকা পরীমনির বাসায় অবস্থান করেছেন।

পুলিশ বিভাগের সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ২৯ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত গোলাম সাকলায়েন এবং পরীমনির ফেসবুক মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপ-এ কথোপকথন পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, তাদের কথোপকথন ‘সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোনো সম্পর্কের নয় বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক।’

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ আগস্ট পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের স্ত্রী না থাকা অবস্থায় নায়িকা পরীমনি তার রাজারবাগস্থ সরকারি বাসায় যায় এবং ১৭ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন।

‘গোলাম সাকলায়েন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমনির সাথে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন।’

‘তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক হওয়া সত্ত্বেও পরীমনির সাথে তার বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, পরীমনির সাথে জন্মদিন উদযাপন ও নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মতো ঘটনা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।’

এ নিয়ে গোলাম সাকলায়েনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়।

সাকলায়েন কী করতে পারে?
সাবেক পুলিশ প্রধান এ কে এম শহিদুল হক বলেন, পুলিশের প্রথম শ্রেণির কোনো কর্মকর্তাকে যদি ‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’ করা হয় তখন সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি কর্ম কমিশনের কাছে পাঠানো হয়।

তিনি বলেন,‘পিএসসি ক্লিয়ারেন্স দিলে মন্ত্রণালয় তাকে টার্মিনেট (চাকুরিচ্যুত) করে। যেহেতু পিএসসি রিক্রুটিং অথরিটি সেজন্য তারা দেখে চাকরিচ্যুতির প্রক্রিয়া ঠিক আছে কী না। সবগুলো ধাপ ঠিক মতো অনুসরণ করা হয়েছে কী না। সাধারণত ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এটা ঠিক থাকে।’

মন্ত্রণালয় চাকরিচ্যুত করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সেটি বিবেচনা করলে তিনি চাকরি ফিরে পেতে পারেন।

তিরি আরো বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তা চাইলে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে যেতে পারবেন। তবে এই ট্রাইব্যুনালকে এড়িয়ে তিনি সরাসরি আদালতে মামলা করতে পারবেন না। তবে যেকোনো সংক্ষুব্ধ চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা চাইলে যেকোনো সময় উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করতে পারেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়েছে। সাকলায়েন মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করেন।

তাছাড়া সাকলায়েন কারণ দর্শানোর বিপরীতে যে জবাব দিয়েছেন সেটি মন্ত্রণালয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877